Recents in Beach

Expectations vs Reality

আমরা নিজেদের এবং অন্যদের কাছ থেকে সব সময় কিছু না কিছু প্রত্যাশা করি। সেটা ক্যারিয়ার, রিলেশনশিপ এমনকি অন্য কিছু হতে পারে। আর আমরা সব সময় সেটাই প্রত্যাশা করি যেটা আমরা চাই কিন্তু সেটা পাই নাই। এই প্রত্যাশাটা এক সময় এমন একটা পর্যায় পৌঁছে যায় যে,সেটার সাথে বাস্তবতা আর কোন মিল থাকে না।
রিলেশনশিপ থেকে আমাদের প্রত্যাশা?

আমরা যখন একটা সম্পর্কের মধ্যে যাই তখন প্রথম চিন্তায় আসে যে আমাদের সম্পর্ক কখনও ভাঙ্গবে না। এটার সাথে কি আদো রিয়েলিটি এর কোন সম্পর্ক আছে? যদি তাই হতো তাহলে বছরের পর বছর এক সাথে থাকার পরও ডিভোর্স হতো না।আচ্ছা ডিভোর্স এর কথা না হয় বাদেই দিলাম।

একটা সম্পর্কে থাকার সময় হুট করে যে কোন একজন মারা যেতেই পারে। তখন তো সেটাও একধরনের বিচ্ছেদই হলো। আর সেই কাছের মানুষটা মারা যাওয়ার পরও কিন্তু অপর জন বছরের পর বছর বেঁচে থাকে। তাহলে আমরা একই সুতোয় বাঁধা দুই জন এই সব অবাস্তব এক্সপেকটেশন করার কি দরকার।

কারণ এই সব অবাস্তব প্রত্যাশায় তো কষ্টের কারন হয়। আমরা সব সময় নিজেদের এই সব অবাস্তব এক্সপেকটেশনের জন্যই কষ্ট পাই আর দোষ দেই অন্য কারও উপর। একটা মানুষের সাথে দীর্ঘদিন থাকার পর তার প্রতি একটা মায়া হবে,সাথে আরও অনেক কিছুই হবে। আর সেসব থেকে দূরে গেলে কষ্টও হবে।একটা মানুষের সাথে একটা টক্সিন সম্পর্কে থেকে সারাজীবন কষ্টের চেয়ে এই কষ্টটাই বেটার মনে হয়।

রিলেশনশিপে বিশ্বাস একটা বড় জায়গা জুড়ে থাকে।আচ্ছা একটু ভেবে বলেন তো, আপনি নিজে নিজের উপর ১০০% বিশ্বাস করতে পারেন কি না? যদি না পারেন, তাহলে অন্য একটা মানুষের কাছে ১০০% এক্সপেকটেশন কিভাবে আশা করেন।

আমরা দিনে কতবার যে নিজের বিশ্বাস নিজে ভাঙ্গি তার কোন ঠিক নাই। এই যেমন ধরুন একজনের ডায়বেটিস, তার মিষ্টি খাওয়া যাবে না। কিন্তু মিষ্টি তো আবার তার খুব পছন্দ। তাই বার বার নিজের কাছে ওয়াদা বদ্ধ হয় যে আর মিষ্টি খাবো না আর ইনসুলিন নিবো না। কিন্তু ঠিকই মিষ্টি খায় আর ঠিকই ইনসুলিন নেয়। এটা খুবই ছোট একটা উদাহরণ দিলাম।

আমরা নিজেরাই নিজেদের ভালোর জন্য ছোট ছোট ওয়াদা গুলো বদ্ধভাবে ধরে রাখতে পারি না। তাহলে অন্য একজন কি ভাবে আমাদেরকে দেওয়া ওয়াদা গুলো বদ্ধভাবে পালন করবে এমন টা আশা করি। 

আমরা একটা সম্পর্ক থাকি এসব অবাস্তব এক্সপেকটেশন না করে একটা ভালো বন্ধুত্ব এক্সপেক্ট করতে পারি। কারন একটা ভালো বন্ধুত্বে কোন ফিল্টার থাকে না। নির্দ্বিধায় আমরা সব কিছু বলতে পারি। এটার জন্য বার বার ভাবতে হয় না।তাই একটা সম্পর্কের মধ্যে বন্ধুত্বটা থাকলে তার সাথে জীবন কাটিয়ে দেওয়া যায়।

এর মধ্যে কিছু কিছু সম্পর্ক আছে যারা এক সাথে খারাপ সময় ভালো সময় সব কিছু দেখেছে। কিন্তু কেউ কখনও কারও হাত ছাড়ে নাই। সেই সম্পর্ক গুলো একটা সময় পর এসব চাওয়া পাওয়া অনেক উর্ধ্বে উঠে গিয়ে ইনসেপারেবল হয়ে যায়। রিলেশনশিপে এরকম হাজার হাজার অবাস্তব এক্সপেকটেশন আমরা করি,যেগুলোর কোন ভিত্তিই থাকে না।

তাই আমাদের নিজেদেরকে আগে বুঝতে হবে।তবেই একটা সুন্দর সম্পর্ক তৈরি হবে। কারণ আমরা মানুষ গুলো গাঠনিক ভাবে আলাদা হলেও আমাদের থিংকিং প্যাটান একই। আমাদের জীবনে প্রত্যেকটা সম্পর্কের গুরুত্ব অনেক।আর তাই এই সম্পর্ক গুলো আরও সুন্দর করতে হলে নিজেকেই আগে নিজের চাওয়া পাওয়া গুলো বুঝতে হবে।
ক্যারিয়ার নিয়ে আমাদের কি চিন্তা করি?

আমরা আমাদের ক্যারিয়ার ঠিক করি, আমরা কি চাই সেটা ভেবে কিন্তু করি না।আমরা সব সময় আমাদের বাবা মা, পরিবার, সমাজ এমনকি পুরো পৃথিবী কি ভাবে সেটার উপর ভিত্তি করে আমাদের ক্যারিয়ার প্লান করি।এরমধ্যে তো বাবা মা নিজেরা যে স্বপ্ন পুরন করতে পারে নাই সেই স্বপ্ন ছেলেমেয়ে দেরকে দিয়ে পূরন করাইতে চায়।

আমরা ১৮ বছর হলে ভোট দেওয়ার অধিকার তো ঠিকই পাইছি কিন্তু জীবনে কি করতে চাই তার সিদ্ধান্ত নেওয়ার অধিকার পাই নাই।আমরা সবাই জানি একটা বাচ্চা পাখিকে খুব ছোট বেলায় মা পাখি ধাক্কা দিয়েই উড়তে শিখায়। অনেক সময় এটা করতে গিয়ে এক্সিডেন্টলি কোন কোন বাচ্চা পড়ে গিয়ে মারাও যায়।তবুও কিন্তু মা পাখি টা এটা করে কারন তা না হলে তার বাচ্চা কখনও উড়তে পারবে না। কারন উড়তে না পাড়লে তো আরও বিপদ,যে কোন সময় সে অন্য কারও শিকারের খাদ্য হতে পারে। তাই রিস্ক নিয়েই কিন্তু বাচ্চা পাখির মা এটা করে।

কিন্তু আমরা সৃষ্টির সেরা জীব তবুও আমাদের ক্ষেত্রে পুরো আলাদা। বাবা মা রিস্ক তো নিতেই পারে না আবার নিজেদের চাওয়া পাওয়া গুলো বাচ্চাদের উপর চাপায় দেয়। জীবন কিন্তু সব সময় একই লাইনে চলে না। বাবা মা না চাইলেও কিন্তু আমাদের জীবনে রিস্ক আসবেই।এমনকি বাবা মা যে ভাবে চান সে ভাবে চললেও এক্সিডেন হতেই পারে। তো ছোট থেকেই পাশে থেকে কেন আমরা ছেলে মেয়েদের রিক্স নেওয়ার শিক্ষাটা দিতে পারি না।

এটা কেন বলতে পারি না যে, ডিসিশন নেও আমরা আছি তোমার পাশে। বরং আমাদের ক্ষেত্রে পুরো আলাদা হয়, যদি নিজে কোন ডিসিশন নিছি আর সেটা ভুল প্রামানিত হইছে তাহলে তো সারাজীবন ওই এক ভুলের খোঁটা শুনে জীবন পার করতে হবে। আমরা এটা কখনোই বুঝতে পারি না এক্সিডেন তো এক্সিডেন্টই। এটা বাবা মা বা আমাদের যে কারও দাঁড়ায় হতে পারে। তাই নিজেদের ডিসিশন গুলো জোর করে চাপায় না দিয়ে পরামর্শ করে করলেও তো হয়।

ক্যারিয়ার নিয়ে বলতে গিয়ে কত কি বলে ফেললাম। যাই হউক আমাদের দেশে এখনও ৮০-৯০% লোক নিজে কি করতে চায় সেটা নিয়ে খুব কম চিন্তা করে বরং তার বড় হওয়া যে রকম পরিবেশে হইছে সে রকমই একটা ক্যারিয়ার প্লান করে সামনে এগিয়ে যায়। আর তখন তো এক্সিডেন্ট হওয়ার সম্ভাবনা আরও বেশি হবেই।কারন চেনা রাস্তার চেয়ে অচেনা রাস্তায় গাড়ি চালালে তো এক্সিডেন্ট হওয়ার সম্ভাবনা বাড়বেই।

আমরা আশেপাশে দেখে একটা লক্ষ্য তো ঠিকই সেট করি কিন্তু সেই লক্ষ্যে পৌঁছার জন্য যে এফোর্ট দেওয়া দরকার তার ১% ও দেই না।আর তখন নিজের এই হাই এক্সপেকটেশন পুরন হবে না এটাই তো স্বাভাবিক। তাই সারাজীবন কি করবো সেটা তো একটু ভেবে চিন্তে নেওয়াই ভালো। আশেপাশের লোক আমার স্বপ্ন নিয়ে কি বলবে সেটা চিন্তা না করে একবার না হয় নিজের মনের টাই শুনলেন।

আর শুধু মনের টা শুনলেই কিন্তু হবে না। এটার জন্য সাকসেস এর পাশাপাশি এক্সিডেন এরও জন্য রেডি থাকতে হবে। আমি তো আমার মনের কথা শুনছি তাই এখানে কোন এক্সিডেন হবেই না।এই অবাস্তব চিন্তা করছেন তো মরছেন। তাই চিন্তা ভাবনা গুলো বাস্তবের সাথে চিন্তা করে ঠিক করলে সাফল্য বা ব্যর্থতা যাই আসুক না কেন তা খুব সহজে অতিক্রম করা যায়। 

এখানে শুধু খুব সংক্ষিপ্তভাবে আমাদের জীবনের দুইটা গুরুত্বপূর্ণ জায়গায় আমরা কি রকম এক্সপেকটেশন করি তার কথা বললাম।দিনে আমরা এরকম আরও কত যে অবাস্তব এক্সপেকটেশন করি তার ঠিক নাই।আর দিন শেষে যখন সে সব অবাস্তব এক্সপেকটেশন গুলো অপূর্ণ থেকে যায় আমরা সে সব নিয়ে চিন্তা করতে করতে বাকিটা জীবন পার করে দেই।

আমি বলছি না যে আমাদের কোন এক্সপেক্টটেশন থাকা যাবে না। কারণ সেটা সম্ভব নয়। মানুষ হিসেবে ন্যাচারেলি আমাদের কিছু প্রত্যাশা থাকবে এটাই স্বাভাবিক। আমি শুধু এতটুকুই বলছি যে, সেসব এক্সপেক্টটেশন যেন অবাস্তব না হয়।পুরো পৃথিবী কি করছ? কি ভাবছে? এসব নিয়ে চিন্তা করার কিছু নেই।শুধু নিজের হিউম্যান ন্যাচারটা বুঝতে হবে যে আমি নিজে কি চাই আর সেটা বাস্তবতার সাথে কতটা যায়। যদি এটা বুঝতে শিখে যাই তাহলে পৃথিবীকে বুঝতে পারা কঠিন কিছু হবে না।

ধন্যবাদ

Post a Comment

0 Comments